
পবিত্র কুরআনে ইরশাদ হয়েছে: “وَالْأَرْضَ وَضَعَهَا لِلْأَنَامِ” — “আর পৃথিবীকে তিনি মানুষের জীবনের জন্য প্রস্তুত করেছেন।” (সূরা আর-রাহমান: ১০)
এবং আরও বলা হয়েছে:
“هُوَ الَّذِي خَلَقَ لَكُمْ مَا فِي الْأَرْضِ جَمِيعًا” — “তিনিই তোমাদের জন্য পৃথিবীর সবকিছু সৃষ্টি করেছেন।” (সূরা আল-বাকারা: ২৯)
এই আয়াতগুলো প্রমাণ করে যে, প্রাকৃতিক সম্পদ — তা খনিজ, জল, ভূমি কিংবা বায়ু যাই হোক না কেন — সব মানুষের জন্য সৃষ্টি, নির্দিষ্ট কোনো শ্রেণি বা জাতির জন্য নয়।
পয়গম্বরের (সা.) হাদীস: তিনটি বিষয়ে সকলেই অংশীদার
রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর একটি হাদীসে বর্ণিত হয়েছে: “মানুষ তিনটি বিষয়ে একে অপরের অংশীদার — পানি, আগুন এবং চারণভূমি।”
এই হাদীসের ব্যাখ্যায় বলা হয়, পানির মতো প্রাকৃতিক সম্পদ যেহেতু সবার জন্য উন্মুক্ত, তাই যে কৃষক এসব যৌথ সম্পদ ব্যবহার করে শস্য উৎপাদন করে, তার ওপর সমাজের গরিব ও অসহায় মানুষের প্রতি দায়িত্ব বর্তায়। সম্ভবত এ কারণেই শস্যে যাকাত ফরজ করা হয়েছে—যাতে সমাজের প্রত্যেকের ন্যায্য অধিকার নিশ্চিত হয়।
ধনীদের সম্পদে গরিবদের অংশীদারিত্ব
কুরআনে আরও বলা হয়েছে: “তাদের সম্পদে প্রার্থী ও বঞ্চিতদের জন্য নির্দিষ্ট অধিকার রয়েছে।” (সূরা আয-যারিয়াত: ১৯)
এই আয়াতের পাশাপাশি হযরত আলী (আঃ) সহ বহু ইসলামি নেতা গরিবদেরকে ধনীদের সম্পদে “সহযোগী” হিসেবে বিবেচনা করেছেন। তাঁর বাণীতে এসেছে— “মুমিনরা যেন গরিব ও অসহায় মুসলমানদের নিজেদের জীবনে অংশীদার বানায়।”
এর অর্থ, ধনী যখন দরিদ্রের কাছে দান করে, তা আসলে কোনো অনুগ্রহ নয়; বরং সে সমাজের এক যৌথ অধিকার পরিশোধ করছে।
ইসলামি সহযোগিতার মূলনীতি
এই দৃষ্টিভঙ্গি ইসলামি সমাজব্যবস্থার গভীরে প্রোথিত একটি নীতিকে সামনে আনে— সম্পদে ব্যক্তিগত মালিকানার পাশাপাশি সামাজিক অংশীদারিত্বের স্বীকৃতি। সমাজের দুর্বল শ্রেণির প্রতি ন্যায্য দায়িত্ব পালনের মাধ্যমে অর্থনৈতিক ভারসাম্য রক্ষা।
এভাবে কুরআন ও সুন্নাহ উভয়ই ঘোষণা দেয় যে, সহযোগিতা (تعاون) শুধু নৈতিক দায়িত্ব নয়, বরং সামাজিক ন্যায়ের মৌলিক শর্ত।
ইসলাম শিখিয়েছে, প্রাকৃতিক সম্পদ মানুষের যৌথ আমানত। আল্লাহ তাআলার নির্দেশনা অনুযায়ী, সমাজের প্রতিটি সদস্যের অধিকার রক্ষা করাই প্রকৃত সহযোগিতা ও ন্যায়বিচারের ভিত্তি।3495065#